Featured Image Wikimedia Commons.

প্রাক-ইতিহাস

১২০০০ বছর আগে এসময় ভিয়েতনামে মানববসতি ছিল তার প্রমাণ মিলেছে। দেশটির প্রথম অধিবাসীরা সম্ভবত ইন্দোনেশিয়া থেকে এসেছিলেন, বসতি স্থাপন করেছিলেন হং নদীর তীরে। হোয়া বিন সভ্যতা।

১০০০০ বছর আগে ভিয়েতনামে বাক সন আর কুন ভ্যান কালচারের বিকাশ ঘটতে শুরু করল, যা ৮০০ পূর্বসাল পর্যন্ত টিকে থাকবে।

ইতিহাস, পূর্বসাল

২৮৭৯-২৫৮ এ-সময় ভিয়েতনামের ভ্যান লাং রাজ্য শাসন করছে হুং রাজবংশ। কিংবদন্তী অনুসারে, এই বংশের প্রথম রাজা হুং ভুয়োং ভিয়েতনামী জাতি গঠন করেন।

২০০০-৪০০ বর্তমান ভিয়েতনামের ভিন ফু প্রদেশে এ-সময় ফুং গুয়েন কালচারের দেখা মিলছে।

৮৫০-৪০ ভিয়েতনামে দং সন সভ্যতার কাল, অধিকাংশ ভিয়েতনামী ঐতিহাসিক মনে করেন এ সময়কালেই ভিয়েতনামীদের জাতীয় পরিচয় তৈরি হয়।

২৫৭ প্রতিবেশী থুক রাজাদের হাতে হুং-দের পতন ঘটল। থুকরা ভ্যান লাং রাজ্য জয় করে নিল। নিজেদের রাজ্যের সাথে ভ্যান লাং রাজ্য জোড়া লাগিয়ে গঠন করল নতুন রাজ্য আউ লাক।

২০৭ পাঁচ শতাব্দী ধরে আউ লাক রাজ্য শাসন করার পর চীনের কিন রাজবংশের হাতে থুক-দের পতন ঘটল। বিজয়ী চীনা বাহিনীর সেনাপতি ছিলেন ঝাও তুয়ো, ভিয়েতনামী ভাষায় যাঁর নাম ত্রিউ দা। পরের বছর হান রাজবংশ চীনে ক্ষমতা দখল করলেও হানদের আনুগত্য স্বীকার করেন নি ত্রিউ দা, থুকদের রাজ্যের সাথে তাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকা চীনা অঞ্চলগুলো জোড়া লাগিয়ে তিনি গঠন করলেন এক নতুন রাজ্য: নাম ভিয়েত

১১১ চীনা সেনাবাহিনী নাম ভিয়েত দখল করে নিল।

ইতিহাস, সাল

৩৯ ভিয়েতনামে চীনা দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ত্রুং বোনেদের বিদ্রোহ। স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করলেন রানী ত্রুং ত্রাক। ৪৩ সাল পর্যন্ত টিকে ছিল এই রাজ্য।

৪৩ ত্রুংদের হাত থেকে নাম ভিয়েত পুনর্দখল করল চীনারা। কিছুদিনের মধ্যেই ত্রুং বোনেদের লাশ পাওয়া গেল। তাঁদের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। [১]

২৪৮ চীনাদের বিরুদ্ধে ও চীন-কবলিত ভিয়েতনামী সমাজে নারীর অবস্থানের ক্রমাবনতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিলেন ভিয়েতনামী নারী ত্রিউ আউ।

৫৪২ চীনা শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলেন ভিয়েতনামী লাই বন। সাময়িক সাফল্য পেলেন, প্রতিষ্ঠা করলেন নিজের রাজ্য। ৫৪৬ সালে চীনাদের হাতে পরাস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত লাই বন ক্ষমতায় থাকবেন।

৬১৮ চীনের তাং রাজবংশ নাম ভিয়েত-এর নাম পাল্টে আন্নাম রাখল, যার মানে ‘যে দক্ষিণাঞ্চলকে শান্ত করা হয়েছে’।

৬১৮-৯০৭ বর্তমান ভিয়েতনাম এসময় আন্নাম নামে পরিচিত ছিল।

৯৩৮ বাখ দাং নদীর ঐতিহাসিক সমরে চীনাদেরকে পরাস্ত করলেন ভিয়েতনামী সেনাপতি নগো কুয়েন।

৯৩৯ চীনা শাসনের হাত থেকে মুক্ত নাম ভিয়েত-এর রাজা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলেন নগো কুয়েন।

১০০৯ নাম ভিয়েত-এর প্রথম বৃহৎ রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করলেন লাই থাই টো। লাই রাজবংশ প্রায় ২০০ বছর ক্ষমতায় ছিল। এদের শাসনকালেই বৌদ্ধধর্মকে ভিয়েতনামের রাষ্ট্রধর্ম করা হয়।

১০৭০ থাং লং-এ নাম ভিয়েত-এর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হল।

১০৭৯ ভিয়েতনামীরা দেশটির দক্ষিণের চম্পা রাজত্বকে পরাস্ত করল। ভারতবর্ষের সাথে চম্পাদের নিয়মিত বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল। দরবারি কাজে সংস্কৃত ভাষা ব্যবহার করত চম্পারা। [২]

১২২৬ নাম ভিয়েত-এ লাই-দের পতন, প্রতিষ্ঠিত হল ত্রান রাজবংশ। ত্রান রাজত্বের শুরুর দিকে দেশটির সমৃদ্ধি ঘটে। ভূমি সংস্কার ও জনপ্রশাসনের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়।

১২৫৭ নাম ভিয়েত দখলের অসফল চেষ্টা চালালেন কুবলাই খান।

১২৮৪ নাম ভিয়েত দখলে মঙ্গোলদের দ্বিতীয় প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হল।

১২৮৭ ভিয়েতনামীরা বাখ দাং নদীতে ৪০০-এরও বেশি মঙ্গোল জাহাজ ডুবিয়ে দিতে সক্ষম হল। সেনাপতি ত্রান হুং দাও মঙ্গোলদের পরাস্ত করেন। তাঁকে দেশটির অন্যতম জাতীয় বীর ভাবা হয়।

সপ্তদশ শতাব্দী এসময়নাম ভিয়েত-এর উত্তরাঞ্চল শাসন করছে ত্রিন রাজবংশ, দক্ষিণাঞ্চল শাসন করছে নগুয়েন রাজবংশ। পরবর্তী ২৫০ বছর এই দ্বৈতশাসন টিকে থাকবে। ফরাসি মিশনারিরা ভিয়েতনামে আসতে শুরু করল।

১৭৭১ নাম ভিয়েত-এ তায় সন ভাইদের নেতৃত্বে কৃষক বিদ্রোহ।

১৭৮৯ নাম ভিয়েত-এ প্রতিষ্ঠিত হল তায় সন রাজবংশ।

১৮০২ ইওরোপীয়দের সহায়তায় নাম ভিয়েত-এর মসনদে বসলেন নগুয়েন আন। নিজের নাম বদলে রাখলেন জিয়া লং। [৩] দেশের নামও বদলালেন: নাম ভিয়েত থেকে ভিয়েতনাম

১৮০২-২০ সম্রাট জিয়া লং’য়ের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ ভিয়েতনামের কাল।

১৮৪১ ফরাসি মিশনারিদের দ্বারা এ-বছর নাগাদ প্রায় ১০ লক্ষ ভিয়েতনামী খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হলেন।

১৮৪৭ ফরাসিরা দা নাং-এ ১০,০০০ ভিয়েতনামীকে হত্যা করে।

১৮৪৮ ভিয়েতনামের শেষ স্বাধীন সম্রাট হলেন তু দাক।

১৮৫৮ ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ান ভিয়েতনামকে একটি প্রটেকটরেটে পরিণত করার জন্য একটি নৌ অভিযাত্রিক দল প্রেরণ করলেন। ভিয়েতনামে ফরাসি উপনিবেশিক শাসনের সূচনা হল।

১৮৫৯ ফরাসি হানাদার বাহিনী সায়গন দখল করে নিল।

১৮৬২ ফরাসিদের সাথে অন্যায্য সায়গন চুক্তি করতে বাধ্য হলেন তু দাক। এই চুক্তিতে সায়গনের নিকটবর্তী তিনটি প্রদেশ ফরাসিদের হাতে তুলে দেয়া হয়। মেকং নদী ব্যবহার করে কম্বোজের সাথে বাণিজ্য করার অধিকারও লাভ করে ফরাসিরা।

১৮৮২-৮৩ ফরাসিরা হামলা চালিয়ে হ্যানয় দখল করে নিল। তু দাকের মৃত্যু। ভিয়েতনামে রাজতন্ত্রের অবসান।

১৮৯০ ভিয়েতনামে নগুয়েন আই কুয়োকের জন্ম, যিনি পরবর্তীকালে হো চি মিন নামে পরিচিতি পাবেন।

১৮৯৩ ভিয়েতনামকে তার পার্শ্ববর্তী দেশ কম্বোডিয়া আর লাওসের অধিকাংশ অঞ্চলের সাথে জুড়ে দিয়ে ফরাসিরা ইন্দোচীন ইউনিয়ন গঠন করল। [৪]

১৯০৮ ভিয়েতনামীদের ফ্রি স্কুল মুভমেন্ট দমন করল ফরাসিরা।

১৯২০ ফরাসি কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হল, যার প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন ছিলেন হো চি মিন।

১৯২৫ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, এ-সময় ভিয়েতনামের স্কুলবয়সী শিশুদের শতকরা মাত্র ১০ ভাগ স্কুলে যাচ্ছে। এ-বছর হো চি মিন ভিয়েতনামের অন্যান্য উপনিবেশবাদবিরোধী ও দেশপ্রেমিক যুবকদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ভিয়েতনাম বিপ্লবী যুব সমিতি। প্রকাশিত হল হো চি মিনের ফ্রেঞ্চ কলোনিয়ালিজম অন ট্রায়াল

১৯২৬ প্রকাশিত হল হো চি মিনের দ্য রেভল্যুশনারি পাথ

১৯২৭ ভিয়েতনামের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূচনা হল।

১৯৩০ ফেব্রুয়ারি ১১: ভিয়েতনাম জাতীয়তাবাদী পার্টির নেতৃত্বে ইয়েন বাই অভ্যুত্থান। ফেব্রুয়ারি ৩০: ভিয়েতনাম কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হল। অক্টোবরে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম কংগ্রেসে পার্টির নাম বদলে রাখা হয় ইন্দোচীনের কমিউনিস্ট পার্টি (আইসিপি)।

১৯৩১ এপ্রিল: ভিয়েতনাম কমিউনিস্ট পার্টি কমিনটার্ন-এর (কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক) একটি সেল হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করল।

১৯৪০ ভিয়েতনামে জাপানি দখলদারিত্বের পর্ব শুরু হল। সেপ্টেম্বরে জাপানি ফ্যাশিস্তদের বিরুদ্ধে বাক সোন অভ্যুত্থান। নভেম্বরে সংঘটিত হল আরেকটি অভ্যুত্থান: নাম কী

১৯৪১ ফেব্রুয়ারি ৮: ৩০ বছর ধরে বিদেশে বাস করার পর ভিয়েতনামে ফিরলেন হো চি মিন, আশ্রয় নিলেন পাক বো গুহায়। ইন্দোচীনের কমিউনিস্ট পার্টি (আইসিপি) জাপানিদের হাত থেকে ভিয়েতনামের জাতীয় মুক্তি ছিনিয়ে আনতে নানান দলের ছাতা সংগঠন ভিয়েত মিন (ভিয়েতনাম স্বাধীনতা লীগ) গঠন করল।

১৯৪৫ ভিয়েত মিন-রা জাপানিদের হাত থেকে উত্তর ভিয়েতনামের অধিকাংশ অঞ্চলই দখল করে নেয়, জাপানিরা মিত্রপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করে। সেপ্টেম্বর ২: ভিয়েতনামের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন হো চি মিন। [৫] প্রতিষ্ঠিত হল ভিয়েতনাম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র।

১৯৪৬ ফরাসিদের সাথে ভিয়েত মিন-দের যুদ্ধ শুরু। এই যুদ্ধ প্রথম ইন্দোচীন যুদ্ধ বলে পরিচিত। নভেম্বর ৯: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ভিয়েতনামের প্রথম সংবিধানটি গৃহীত হল।

১৯৫০ জানুয়ারিতে ভিয়েতনাম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রকে স্বীকৃতি প্রদান করল ও হো চি মিন সরকারের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করল সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীন। চীনাদের আর্থিক ও সামরিক সাহায্য পেল ভিয়েতনাম। নভেম্বর ৩০: ভিয়েতনাম একটি নতুন জাতীয় পতাকা গ্রহণ করল।

১৯৫৩ দিয়েন বিয়েন ফুর ঐতিহাসিক সমর শুরু হল।

১৯৫৪ মে ৭: ৫৫ দিনের যুদ্ধ শেষে ভিয়েতনামীদের হাতে দিয়েন বিয়েন ফুর ফরাসি ঘাঁটির পতন ঘটল। পরাজিত ফরাসি বাহিনী ভিয়েতনামীদের কাছে আত্মসমর্পণ করল। ভিয়েতনামে ফরাসি উপনিবেশিক শাসনের আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি।

জেনেভা চুক্তি ফ্রান্স আর উত্তর ভিয়েতনামের মধ্যকার যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাল এবং ভিয়েতনামকে ১৭ ডিগ্রি অক্ষরেখায় ভাগ করল। উত্তরে প্রতিষ্ঠিত হল ভিয়েতনাম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র (ডিআরভি)। দক্ষিণে প্রতিষ্ঠিত হল ভিয়েতনাম প্রজাতন্ত্র (আরভিএন)।

১৯৫৫ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আইসেনহাওয়ার দক্ষিণ ভিয়েতনামে টাকা ও সামরিক উপদেষ্টাদেরকে পাঠাতে শুরু করলেন।

১৯৫৮ ফেব্রুয়ারিতে মার্কিনীদের প্রতি অনুগত নগো দিন দিয়েম সরকার দক্ষিণ ভিয়েতনামের ফু লোই বন্দীশিবিরে ১,০০০ বিপ্লবীকে খুন করল।

১৯৫৯ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ভিয়েতনামের দ্বিতীয় সংবিধান গৃহীত হল।

১৯৬০ গঠিত হল দক্ষিণ ভিয়েতনাম জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট।

১৯৬২ দক্ষিণ ভিয়েতনামে এ-সময় মার্কিন সামরিক উপদেষ্টার সংখ্যা ১২,০০০।

১৯৬৩ ক্ষমতাচ্যুত ও খুন হলেন দক্ষিণ ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী নগো দিন দিয়েম। দক্ষিণ ভিয়েতনামের ক্ষমতায় বসলেন সেনাপতি দুয়োং ভ্যান মিন। এই পরিবর্তনের আড়ালে কলকাঠি নাড়ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি প্রশাসন।

শুরু হয়ে গেল দ্বিতীয় ইন্দোচীন যুদ্ধ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যা ভিয়েতনাম যুদ্ধ নামে পরিচিত।

১৯৬৪ ভিয়েতনাম নিয়ে মার্কিনী যুক্তরাষ্ট্রের জনসন-ম্যাকনামারা পরিকল্পনা, যার উদ্দেশ্য ছিল দক্ষিণ ভিয়েতনামকে ১৯৬৫ সালের মধ্যে ‘ঠাণ্ডা করা’। আগস্ট ৫: টংকিং উপসাগরের কথিত উসকানিমূলক ঘটনা। উত্তর ভিয়েতনামে মার্কিনীদের নির্বিচার বোমাবর্ষণ শুরু হল।

১৯৬৫ ভিয়েতনামে ২ লক্ষ মার্কিন সেনার আগমন ঘটল।

১৯৬৮ বিখ্যাত টেট অফেন্সিভ: ভিয়েতনামে মার্কিনীদের বিরুদ্ধে দুই ভিয়েতনামের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের চালানো রক্তক্ষয়ী হামলা, টেলিভিশনে এই হামলায় নিহত মার্কিন সেনাদের লাশ বিমানে করে দেশে আনার দৃশ্য দেখে মার্কিনীদের মধ্যে ব্যাপক যুদ্ধবিরোধী মানস তৈরি হয়। মাই লাই গণহত্যা: মার্কিনীদের হাতে ৫০০ ভিয়েতনামী বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু। ভিয়েতনামীদের তীব্র প্রতিরোধর মুখে মার্কিনীরা দেশটিতে বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে বাধ্য হল।

১৯৬৯ দক্ষিণ ভিয়েতনামে অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার গঠিত হল। সেপ্টেম্বর ৩: হো চি মিনের মৃত্যু। ১২১টি দেশের কাছ থেকে শোক বার্তা এল।

১৯৭০ প্যারিসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার ও ভিয়েতনাম সরকারের প্রতিনিধি লি ডাক থো-র মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু হল।

১৯৭১ ভিয়েতনামের ইতিহাসের অন্যতম প্রলয়ঙ্করী বন্যায় ১ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হল।

১৯৭২ শেষ মার্কিন সেনারা দক্ষিণ ভিয়েতনাম ছেড়ে গেল। দ্বিতীয় ইন্দোচীন যুদ্ধে ১৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়, যাদের অধিকাংশই ভিয়েতনামী। এই সংঘাতে ৫৮,০০০ মার্কিন সেনার মৃত্যু হয়।

১৯৭৩ প্যারিসে মার্কিনী আর ভিয়েতনামীদের মধ্যে শান্তি চুক্তি সই হল, মার্চের মধ্যে ভিয়েতনাম ছেড়ে গেল শেষ মার্কিন সেনা। [৬]

১৯৭৪ প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে চীনের সাথে দক্ষিণ ভিয়েতনামের সংঘাত।

১৯৭৫ উত্তর ভিয়েতনামের কমিউনিস্টরা বিজয়ীর বেশে সায়গনে প্রবেশ করল এবং ভিয়েতনামকে ঐক্যবদ্ধ করল। দ্বিতীয় ইন্দোচীন যুদ্ধের অবসান। ভিয়েতনামে কমিউনিস্ট পার্টির একদলীয় একনায়কতন্ত্রের সূচনা হল।

১৯৭৬ ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হল। সায়গনের নাম পাল্টে রাখা হল হো চি মিন সিটি। কমিউনিস্টদের বহু বিরোধী দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেন।

১৯৭৮ গণতান্ত্রিক কম্পুচিয়ার সাথে ভিয়েতনামের সীমান্ত সংঘাতের সূচনা।

১৯৭৯ ভিয়েতনামীদের হাতে কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনের পতন ঘটল। পল পটসহ অপরাপর খেমার রুজ নেতারা কম্বোডিয়া ছেড়ে পালিয়ে গেলেন। আশ্রয় নিলেন দেশটির থাইল্যান্ড সীমান্তে। ভিয়েতনামের উদ্যোগে কম্বোডিয়ায় গঠিত হল গণপ্রজাতন্ত্রী কম্পুচিয়া।আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দেশটিতে ‘ভিয়েতনামী আগ্রাসনের’ নিন্দা জানাল। খেমার রুজদের ব্যাকার চীন ভিয়েতনাম আক্রমণ করল, দু’দেশের মধ্যে ১৬ দিনের সীমান্তযুদ্ধ। ভিয়েতনামীরা এই যুদ্ধে চীনাদেরকে পিছু হঠিয়ে দেয়।

১৯৮০ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ভিয়েতনামের তৃতীয় সংবিধান গৃহীত হল।

১৯৮৬ ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট সরকার এই দশকের মাঝামাঝি দই মই নীতি নিল, যা মুক্ত বাজার অর্থনীতিকে আংশিকভাবে উৎসাহিত করল।

১৯৮৯ কম্বোজ থেকে সেনা প্রত্যাহার করল ভিয়েতনাম।

১৯৯০ সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি থেকে সরতে শুরু করল ভিয়েতনাম। মুক্ত বাজার অর্থনীতির দিকে ঝুঁকতে শুরু করল।

১৯৯২ এই বছর নাগাদ চীন ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ দুনিয়ার অধিকাংশ দেশ ভিয়েতনামের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক চালু করল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ভিয়েতনামের চতুর্থ সংবিধান গৃহীত হল।

১৯৯৪ ভিয়েতনামের ওপর থেকে তিন দশকের বাণিজ্যিক অবরোধ প্রত্যাহার করল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

১৯৯৫ অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনসে (আসিয়ান) যোগ দিল ভিয়েতনাম। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করল ভিয়েতনাম।

১৯৯৯ নভেম্বরে-ডিসেম্বরে বন্যায় ভিয়েতনামে ৮০০-রও বেশি মানুষের মৃত্যু হল, আর ভিটেমাটি হারালেন ৫০,০০০ মানুষ।

২০০০ ভিয়েতনামে প্রথম স্টক মার্কেট চালু করা হল, দেশটি সফর করলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন।

২০০৫ ভিয়েতনাম যুদ্ধের অবসানের পর প্রথম ভিয়েতনামী নেতা হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র সফর করলেন ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী ফান ভ্যান খাই।

২০০৭ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সদস্যপদ লাভ করল ভিয়েতনাম।

২০০৮ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে দুই শিশু নীতি নিল ভিয়েতনাম।

২০১০ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) ভিয়েতনাম সরকারের বিরুদ্ধে অনলাইন ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর দমনপীড়ন চালানোর অভিযোগ তুলল।

২০১১ ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় মার্কিন সেনাবাহিনী দেশটিতে যে-বিষাক্ত এজেন্ট অরেঞ্জ ছড়িয়েছিল, তার দূষণ থেকে দেশটিকে মুক্ত করতে ভিয়েতনাম সরকার আর যুক্তরাষ্ট্র সরকার যৌথভাবে কাজ করতে শুরু করল।

২০১৬ ভিয়েতনামের কাছে অস্ত্র বিক্রির ব্যাপারে মার্কিনীদের যে-অবরোধ আরোপ করেছিল, তা এ-বছর তুলে নেয়া হয়।

অন্ত্যটীকা

[১] চীনা ঐতিহাসিকদের মতে, ত্রুং বোনেরা চিনা সেনাবাহিনীর হাতে খুন হয়ে গেছিলেন। কিন্তু ভিয়েতনামী ঐতিহাসিকরা এই ইতিহাস অস্বীকার করেন। সত্য যাই হোক, মৃতারা শহিদে পরিণত হন; বর্তমানে তাঁদেরকে বিদেশি শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক হিসাবে দেখা হয়।

[২] নাম ভিয়েত-এর উত্তরাঞ্চলের সাথে চীনের সম্পর্ক জোরদার ছিল। অন্যদিকে, দক্ষিণাঞ্চলের সাথে সম্পর্ক ভালো ছিল ভারতবর্ষের। এই উত্তর-দক্ষিণ বিভাজন ভিয়েতনামী রাজনীতিতে একটি বাস্তবতা।

[৩] এই পরিবর্তনের পেছনে একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। সেসময় বর্তমান ভিয়েতনামের দক্ষিণাঞ্চলের সায়গনের নাম ছিল জিয়া দিন আর উত্তরাঞ্চলের হ্যানয়ের নাম ছিল থাং লং। দুই এলাকার নাম মিলিয়ে নিজেকে ঐক্যবদ্ধ ভিয়েতনামের প্রতীক হিসাবে দেখাতে চেয়েছিলেন জিয়া লং।

[৪] ইতিহাসের পরিহাস হচ্ছে, এই তিনটি দেশেই ফরাসিরা দীর্ঘমেয়াদে মার খাবে, এবং প্রতিটি দেশেই কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করবে।

[৫] হোর ঘোষণাপত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও ফ্রান্সের মানুষ ও নাগরিকদের ঘোষণাপত্রের প্রতিধবনি করেছিল।

[৬] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামে কোনো সমরে হারেনি। কিন্তু তারা যুদ্ধে হেরে গেছে। সারা বিশ্বের জনমত ছিল ভিয়েতনামীদের পক্ষে।

তথ্যসূত্র

মূল গ্রন্থে লেখকের নাম নেই। ভিয়েতনাম ওয়ার্কার্স পার্টির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। নুরুল হুদা মির্জা কর্তৃক অনূদিত। ঢাকা: চলন্তিকা বইঘর, ১৯৭২।

BBC. “Vietnam profile – Timeline.” BBC, April 22, 2018.
https://www.bbc.com/news/world-asia-pacific-16568035

Church, Peter, ed. 2009. A Short History of South-East Asia. Singapore: Wiley.

Phillips, Douglas A. Vietnam. New York: Chelsea House, 2006.

নোট: ইরফানুর রহমান রাফিনের নন-ফিকশন সময়রেখা ঢাকার দিব্যপ্রকাশ কর্তৃক ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। এই ব্লগটি সেই বই সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রকল্প। ঢাকা, চট্টগ্রাম, ও সিলেটের বিভিন্ন বইয়ের দোকানে পাওয়া যাবে সময়রেখা, এবং অনলাইনে অর্ডার দিয়েও সংগ্রহ করা যাবে।

অনলাইন অর্ডার লিংকসমূহ

দিব্যপ্রকাশ । https://www.facebook.com/dibya.prakash.7
রকমারি । https://www.rokomari.com/book/227084/somoyrekha
বইবাজার । https://www.boibazar.com/book/somoyrekha
বাতিঘর । https://baatighar.com/shop/product/61547#attr=
ওয়াফিলাইফ । https://www.wafilife.com/shop/books/somoyrekha
বইয়ের দুনিয়া ।https://www.boierduniya.com/book/%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%9F%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%96%E0%A6%BE/