Featured Image: Wikimedia Commons.

Image: The Nations Online Project.

প্রাক-ইতিহাস

১৫০০০ বছর আগে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে অস্ট্রেনেশীয় বা মালয়-পলিনেশীয় মানুষেরা তাইওয়ানে অভিবাসিত হতে শুরু করলেন। দেশটির বর্তমান আদিবাসীরা সম্ভবত এই মানুষদেরই বংশধর। আদিবাসী তাইওয়ানিরা কাও-শান জু বা পাহাড়ি বলে পরিচিত।

ইতিহাস, সাল

১৫৯০ পর্তুগিজরা তাইওয়ান আবিষ্কার করে এর নাম দিল ইলহা ফরমোজা, যার অর্থ ‘সুন্দর দ্বীপ’।

১৬২২ ওলন্দাজরা তাইওয়ানিদেরকে প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টধর্মের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।

১৬২৪ ওলন্দাজরা দক্ষিণপশ্চিম তাইওয়ানে জিল্যান্ডিয়া নামে একটি দুর্গ নির্মাণ করল, যা বর্তমান আনপিং শহরে অবস্থিত। স্পেনীয়রা তাইওয়ানিদেরকে ক্যাথলিক খ্রিস্টধর্মের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।

১৬২৬ স্পেনীয়রা উত্তরপশ্চিম তাইওয়ানের সেখানে বসতি স্থাপন করল, যে-জায়গাটা বর্তমানে কিলুং নামে পরিচিত।

১৬৫০-এর দশক ওলন্দাজরা এসময় তাইওয়ানে চীনা অভিবাসনে উৎসাহ যোগাচ্ছে, চীনা চাষীদেরকে শস্তায় কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে।

১৬৫৩ ওলন্দাজরা দক্ষিণপশ্চিম তাইওয়ানে প্রভিন্সিয়া নামে একটি প্রশাসনিক কেন্দ্র স্থাপন করল, যা বর্তমান তাইনান শহরে অবস্থিত।

১৬৬৪ তাইওয়ানে ওলন্দাজ উপনিবেশিক শাসনের অবসান হল, এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেন চীনা সমরনায়ক ছেং চেং-কুং।

১৬৮০ এই দশক নাগাদ ১ থেকে দেড় লক্ষ হান চীনা বসতিস্থাপনকারী তাইওয়ানে বসতিস্থাপন করলেন।

১৬৮৩ চীনের কিং রাজবংশ তাইওয়ান দখল করে নিল।

১৮৮৫ চীন প্রথমবারের মত তাইওয়ানকে পূর্ণ প্রাদেশিক মর্যাদা দিল।

১৮৯৫ আগের বছর শুরু হওয়া চীন-জাপান যুদ্ধের পরিণতিতে শিমোনোসেকি চুক্তির মধ্য দিয়ে তাইওয়ানকে জাপানের হাতে তুলে দিল চীন। পরবর্তী পাঁচদশক তাইওয়ান ছিল একটি জাপানি উপনিবেশ। এ-বছরই তাইপেই’কে তাইওয়ানের রাজধানী ঘোষণা করা হয়।

১৯৩০ জাপানি উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে তাইওয়ানিদের উশে বিদ্রোহ দমন করা হল।

১৯৩৫ এ-বছর নাগাদ তাইওয়ানে ২৭০,০০০ জাপানি বাস করছেন।

১৯৪৩ তাইওয়ানে এ-সময় দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা ১৪৭,০০০। খনি, পরিবহন, যোগাযোগ ও অন্যান্য অকৃষি খাতে কাজ করা শ্রমিকের সংখ্যা ২০০,০০০-এরও বেশি। এর আগে তাইওয়ানের অর্থনীতি ছিল মূলত কৃষিনির্ভর, জাপানি ফ্যাসিস্টদের হাতে দেশটির শিল্পায়নের শুরুয়াত হয়।

কায়রো চুক্তি তাইওয়ানকে চীনা জাতীয়তাবাদীদের হাতে তুলে দিল।

১৯৪৫ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রপক্ষের হাতে সাম্রাজ্যিক জাপানের শোচনীয় পরাজয় ঘটলে তাইওয়ানের সকল জাপানি দ্বীপটি ছেড়ে জাপানে চলে যান। মিত্রপক্ষ তাইওয়ানের নিয়ন্ত্রণ চীনের হাতে অর্পণ করে।

১৯৪৭ চীনা জাতীয়তাবাদী কুয়োমিনটাং শাসনের বিরুদ্ধে তাইওয়ানিদের বিদ্রোহ। তাইওয়ানে সামরিক আইন জারি করল চীনা জাতীয়তাবাদীরা। মুক্ত নির্বাচনের দাবি তোলা বহু প্রতিবাদী খুন।

১৯৪৯-৫০ চীনের গৃহযুদ্ধে কমিউনিস্টদের হাতে জাতীয়তাবাদীদের পরাজয় ঘটে। এর ফলে চিয়াং কাইশেকের কুয়োমিনটাং’য়ের সাথে যুক্ত প্রায় দুই লক্ষ চীনা জাতীয়তাবাদী পালিয়ে গিয়ে তাইওয়ানে আশ্রয় নেন। ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তাইওয়ান, যার আনুষ্ঠানিক নাম চীন প্রজাতন্ত্র, কার্যত একটি কুয়োমিনটাং-নিয়ন্ত্রিত একদলীয় একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্র ছিল।*

*১৯৭০-র দশক পর্যন্ত জাতিসংঘ ও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো এই তাইওয়ানভিত্তিক চীন প্রজাতন্ত্রকেই চীনের বৈধ সরকার বলে গণ্য করেছে।

১৯৪৯-৫৩ তাইওয়ানে চীনা জাতীয়তাবাদী সরকারের ‘চাষীর জন্য জমি’ কর্মসূচি।

১৯৫০ কোরিয়া যুদ্ধের সময় চীনের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব তৈরি হলে মার্কিন মিত্র হয়ে উঠল তাইওয়ান।

১৯৫৪ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি সই করল তাইওয়ান।

১৯৭১ চিয়াং কাইশেক দ্বৈত প্রতিনিধিত্বের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন। জাতিসংঘ গণ চীন সরকারকে চীন রাষ্ট্রের একমাত্র বৈধ প্রতিনিধি বলে স্বীকার করে নিল। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের আসন লাভ করল চীন।

১৯৭৫ চিয়াং কাইশেকের মৃত্যু। তাইওয়ানের কার্যকর নেতা হলেন কাইশেকপুত্র চিয়াং চিং-কুয়ো। ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত আমৃত্যু শাসন করেন চিং-কুয়ো।

১৯৭৯ কাওসিয়ুং ঘটনা: গণতন্ত্রপন্থী প্রতিবাদীদেরকে খুন করল তাইওয়ানি পুলিশ, সব বিরোধী নেতাকে গ্রেপ্তার করল। ‘এক চীন নীতি’ গ্রহণ করল যুক্তরাষ্ট্র, তাইপেই’য়ের বদলে বেইজিং’কে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিল। এ-বছরই দেশটিতে তাইওয়ান রিলেশনস অ্যাক্ট প্রণীত হয়, যা পরিষ্কারভাবে বলল চীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তের পেছনে ভবিষ্যতে তাইওয়ান সংকট শান্তিপূর্ণভাবে সুরাহা করা হবে এই প্রত্যাশা আছে।

১৯৮৬ তাইওয়ানি রাজনীতির গণতন্ত্রায়ন। কুয়োমিনটাং-ভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতি করার সুযোগ পেল। প্রকাশিত হল টমাস গোল্ডের স্টেট অ্যান্ড সোসাইটি ইন দ্য তাইওয়ান মিরাকল

১৯৮৭ তাইওয়ানে জারি থাকা সামরিক আইন বিলুপ্ত হল।

১৯৮৮ কাও-শান জু বা পাহাড়ি বলে পরিচিত আদিবাসী তাইওয়ানিরা তাঁদের ভূমি ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করলেন। এ-বছরই তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট হন লি তুং-হুই। শুরু করেন তাইওয়ানিকরণ

১৯৯০ গণ চীনের বিরুদ্ধে তাইওয়ান ৪০ বছর ধরে যে-যুদ্ধাবস্থায় ছিল, এ-বছর তার অবসানের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিল তাইওয়ান।

১৯৯১ আদিবাসী তাইওয়ানিদের ‘আমাদের ভূমি ফিরিয়ে দাও’ আন্দোলন ‘আদিবাসী সাংবিধানিক আন্দোলনে’ রূপান্তরিত হল।

১৯৯৬ তাইওয়ানে প্রথমবারের মত মুক্ত নির্বাচন আয়োজিত হল। দেশটির প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হলেন লি তুং-হুই। চীন এই নির্বাচন ভণ্ডুল করার চেষ্টায় চালায়, কিন্তু মার্কিনীদের বাধার মুখে পিছু হঠে।

১৯৯৭ হংকং-কে চীনের হাতে তুলে দেয়ার প্রতিবাদে এ-বছরের জুলাইয়ে তাইওয়ানের রাজধানী তাইপেই’য়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করলেন ৭০,০০০ মানুষ।

১৯৯৯ মুরে রুবেনস্টেইনের সম্পাদনায় প্রকাশিত হল তাইওয়ান: আ নিউ হিস্টোরি

২০০০ তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন স্বাধীনতাপন্থী ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির ছেন শুই-বিয়ান। তিনিই দেশটির ইতিহাসের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান যার ক্ষমতারোহণে কুয়োমিনটাং’য়ের কোনো ভূমিকা ছিল না। তাইওয়ানের কুয়োমিনটাং-য়ের পাঁচদশকের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান হল।

২০০১ নির্বাসিত তিব্বতী আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামা তাইওয়ানি প্রেসিডেন্ট ছেনের সাথে সাক্ষাৎ করলেন, চীন এর কড়া প্রতিবাদ জানাল।

২০০২ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) যোগ দিল তাইওয়ান।

২০০৪ দ্বিতীয় মেয়াদে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ছেন শুই-বিয়ান।

২০০৫ বেইজিং একটি বিচ্ছিন্নতাবিরোধী বিল প্রণয়ন করল, যাতে চীন থেকে তাইওয়ানের বিচ্ছিন্ন হওয়ার যেকোনো প্রচেষ্টা অবৈধ ঘোষিত হল।

২০০৭ তাইওয়ান প্রথমবারের মত জাতিসংঘে যোগদানের প্রয়াস চালাল। তবে আনুষ্ঠানিক নাম চীন প্রজাতন্ত্র নামে নয়, তাইওয়ান নামে। তাঁদের আবেদন খারিজ হয়ে গেল।

২০০৮ কুয়োমিনটাং’য়ের মা ইং-জিউ তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। একদলীয় একনায়কতন্ত্রের আমলে হাজার হাজার বিরোধীকে কারাগারে পাঠানো ও হত্যা করার জন্য দলের পক্ষে ক্ষমা চাইলেন ইং-জিউ। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের জন্য উচ্চপদস্থ চীনা কর্মকর্তা ছেন শুই-বিয়ান তাইওয়ান সফর করলেন, তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থীদের তীব্র প্রতিবাদ।

২০০৯ তাইওয়ান ও চীনের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সই হল।

২০১২ দ্বিতীয় মেয়াদে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন মা ইং-জিউ।

২০১৪ চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে সরকার পর্যায়ের বৈঠক, ১৯৪৯ সালের পর এই প্রথমবারের মত।

২০১৫ সিঙ্গাপুরে তাইওয়ানি প্রেসিডেন্ট মা ইং-জিউ আর চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-য়ের মধ্যে এক ঐতিহাসিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হল।

২০১৬ স্বাধীনতাপন্থী ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির নেত্রী সাই ইং-ওয়েন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। চীন তাইওয়ানের সাথে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ স্থগিত করল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টেলিফোনে নবনির্বাচিত তাইওয়ানি প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সাথে কথা বললেন।

২০১৭ তাইওয়ানের সংসদে দ্বীপটির কর্তৃত্ববাদী অতীতের সব প্রতীক সরিয়ে নেয়ার পক্ষে আইন পাশ হল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন তাইওয়ানের কাছে ১৪০ কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র বিক্রয়ের অনুমোদন দিল। এতে বেইজিং’য়ে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হল।

২০২২ জুলাই: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দুই ঘন্টা ধরে মোবাইলে কথা বললেন। বাইডেন শি-কে এই বলে আশ্বস্ত করলেন যে তাইওয়ানের ব্যাপারে মার্কিন নীতি অপরিবর্তিত আছে। আগস্ট: মার্কিন হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির অপ্রত্যাশিত তাইওয়ান সফর চীন-তাইওয়ান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি ঘটাল, যুদ্ধের আশঙ্কা।

তথ্যসূত্র

BBC. 2019. “Taiwan profile – Timeline.” BBC, February 1, 2019.
https://www.bbc.com/news/world-asia-16178545

Reuters. 2022. “Milestones in relations between the U.S., China, and Taiwan.” Reuters, August 2, 2022.
https://www.reuters.com/world/milestones-relations-between-us-china-taiwan-2022-08-02/

Salter, Christopher L. 2004. Taiwan. Philadelphia: Chelsea House.

নোট: ইরফানুর রহমান রাফিনের নন-ফিকশন সময়রেখা ঢাকার দিব্যপ্রকাশ কর্তৃক ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। এই ব্লগটি সেই বই সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রকল্প। ঢাকা, চট্টগ্রাম, ও সিলেটের বিভিন্ন বইয়ের দোকানে পাওয়া যাবে সময়রেখা, এবং অনলাইনে অর্ডার দিয়েও সংগ্রহ করা যাবে।

অনলাইন অর্ডার লিংকসমূহ

দিব্যপ্রকাশ । বাতিঘর । বইবাজার । বইয়ের দুনিয়া । বইফেরী । বুক হাউজ । ওয়াফিলাইফ । রকমারি