Featured Image Wikimedia Commons.

প্রাক-ইতিহাস

১ লক্ষ বছর আগে বর্তমানে যেখানে ক্রোয়েশিয়া নামের দেশটি অবস্থিত, সেখানে এ-সময় আদিম মানুষের বসবাস ছিল, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

ইতিহাস, পূর্বসাল

২৫০০ বর্তমানে যেখানে ক্রোয়েশিয়া, সেখানে ভুচেদল সংস্কৃতির সমৃদ্ধিকাল।

১১০০ ইলিরীয় গোষ্ঠীগুলো ক্রোয়েশিয়ায় বসতিস্থাপন করতে শুরু করল।*

* ভাষাতাত্ত্বিক বিচারে, ইলিরীয়রা একটি ইন্দো-ইওরোপীয় জনগোষ্ঠী ছিল।

৪০০ রাজা তৃতীয় ফিলিপের নেতৃত্বে গ্রিকদের ইলিরিয়া আক্রমণ।

দ্বিতীয় শতাব্দী রোমক সাম্রাজ্য ক্রোয়েশিয়ার ডালমাশিয়া পর্যন্ত প্রসারিত হল।

সম্রাট অগাস্টাসের নেতৃত্বে রুমিরা ইলিরিয়া জয় করে।

ইতিহাস, সাল

ষষ্ঠ শতাব্দী স্লাভিক গোষ্ঠীগুলো ক্রোয়েশিয়ায় বসতিস্থাপন করতে শুরু করল।

সপ্তম শতাব্দী ক্রোয়াটরা এই শতাব্দীতে ডালমাশিয়ায় বসতিস্থাপন করে।*

* ক্রোয়াটদের উৎস নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ আছে। কেউ মনে করেন এরা ষষ্ঠ শতাব্দীতে ক্রোয়েশিয়ায় আসা স্লাভিক গোষ্ঠীরই একটি শাখা মাত্র। কেউ মনে করেন এরা উৎসগতভাবে ইরানি, যারা কোনো এককালে রুশ স্তেপে অভিবাসিত হয় এবং স্লাভিক সংস্কৃতি গ্রহণ করে নিয়ে পরবর্তীতে বলকানে চলে আসে। আবার কেউ মনে করেন, ক্রোয়াটরা আসলে কোনো গোষ্ঠী ছিল না, এরা ছিল প্রাচীন নাইট যারা আভার সাম্রাজ্যের সীমান্তরক্ষীর ভূমিকা পালন করত। উৎস যাই হোক, এরা স্লাভিক হয়ে গেছে, এবং বর্তমানে দেশটির অধিবাসীদের নাগরিক পরিচয় ক্রোয়েশীয়-রই প্রাধান্য পাওয়া উচিত। তাছাড়া ‘শুদ্ধ জাতির’ ধারণাটা অবৈজ্ঞানিক ও বর্ণবাদী। দুনিয়ার সব জাতির রক্তই কমবেশি মিশ্র, দুনিয়ায় অবিমিশ্র রক্তের কোনো শুদ্ধ জাতি নাই।

৭২৩ ক্রোয়েশিয়ায় প্রথমবারের মত কিছু ইহুদির আগমন ঘটল।

অষ্টম শতাব্দী ফ্রাঙ্ক গোষ্ঠী ক্রোয়াটদের ওপর আধিপত্য লাভ করে।*

*ফ্রাঙ্করা একটি জার্মানিক গোষ্ঠী। বর্তমান ফরাসিদের পূর্বপুরুষ। বাংলায় ফিরিঙ্গি শব্দটা এসেছে আরবি ফিরানজি থেকে, ফিরানজি ফ্রাঙ্কের আরবি।

৮০৩ ক্রোয়েশীয় গোষ্ঠীগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে শার্লামেইনের শাসন মেনে নিল।*

* শার্লামেইন ছিলেন পবিত্র রোমক সাম্রাজ্যের প্রথম সম্রাট। তাঁর দাদা শার্ল মার্টেলের নেতৃত্বে ফ্রাঙ্করা ৭৩২ সালের ১০ অক্টোবর আরব-মুসলিম উমাইয়া খেলাফতের সেনাবাহিনীকে প্যারিসের খুব কাছে পয়তিয়ের্স/তুর্স-এর সমরে পরাজিত করে। ফরাসি উগ্রডানপন্থীদের চোখে শার্ল মার্টেল একজন ‘জাতীয় বীর’, যিনি ‘খ্রিস্ট ভূমি’ ফ্রান্সকে ‘ইসলামের হাত থেকে রক্ষা করেছেন।’

৮৭৯ ক্রোয়াটরা রোমক ক্যাথলিক মতবাদ গ্রহণ করে নিল।

৯২৪/৯২৫ তোমিস্লাভকে ক্রোয়েশিয়ার রাজমুকুট পরানো হল।*

* অনেক ঐতিহাসিকের মতে তিনি ক্রোয়েশিয়ার প্রথম রাজা।

৯১০-৯২৮ ক্রোয়েশিয়ার তোমিস্লাভ বুলগার আর হাঙ্গেরীয়দেরকে পরাস্ত করলেন।*

৯২৫-১০৮৯ এ-সময় ক্রোয়েশিয়া শাসন করছে ত্রিপিমিরোভিচ রাজত্ব।

১০৯১ জাগরেবে বিশপরিক প্রতিষ্ঠা করলেন হাঙ্গেরির রাজা প্রথম লাসলো।

১১০২ হাঙ্গেরি আর ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে প্যাক্টা কোভেন্টা সই, এর মধ্য দিয়ে ক্রোয়েশীয়-হাঙ্গেরীয় রাজত্বের সূচনা।

১১১৫-১৪২০ ডালমাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে হাঙ্গেরি আর ভেনিসের যুদ্ধ।

১২৪২ বাতু খানের নেতৃত্বে মঙ্গোলরা ক্রোয়েশিয়া আক্রমণ করে।

১৩১৭ ক্রোয়েশিয়ার বিখ্যাত দুব্রোভনিক ফার্মেসি খোলা হল। এটা ইওরোপের সবচে পুরনো ফার্মেসিগুলোর একটি। দুব্রোভনিক ফার্মেসি এখনো চালু আছে।

১৪২০ বর্তমান ইতালির ভেনিস নগররাষ্ট্রের অধীনস্ত হল ডালমাশিয়া।

১৫২১ প্রকাশিত হল মার্কো মারুলিচের মহাকাব্যিক কবিতা জুদিতা

১৫২৬ মোহাকের যুদ্ধে ক্রোয়াটদের বিরুদ্ধে ওসমানি তুর্কিদের জয়লাভ। ততোদিনে ক্রোয়েশিয়ার পার্শ্ববর্তী সার্বিয়া এবং বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা ওসমানি সালতানাতের অংশ হয়ে গেছে। ক্রোয়াট অভিজাতদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক দেখা দিল।

১৫২৭ ওসমানিদেরকে ঠেকাতে ক্রোয়াট অভিজাতরা অস্ট্রিয়ার হাপসবুর্গ রাজপরিবারকে ক্রোয়েশিয়া শাসন করার জন্য ডেকে আনে। এই সিদ্ধান্ত ক্রোয়াটদেরকে ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়। ১৯১৮ সাল পর্যন্ত ক্রোয়েশিয়া অস্ট্রো-হাঙ্গেরির অংশ ছিল।

১৫৬২ প্রকাশিত হল স্তিপান কনজুল আর আন্তন ডালমাতিন কৃত বাইবেলের প্রথম ক্রোয়াট তর্জমা।

ষষ্ঠদশ শতাব্দী ওসমানি সালতানাতের বলকান প্রদেশসমূহ আর ক্রোয়েশিয়ার সীমান্তে একটি সামরিক অর্ডার প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল ক্রোয়েশিয়ায় এবং শেষ বিচারে পশ্চিম ইওরোপে ওসমানি তুর্কিদের অগ্রাভিযান ঠেকানো। আজকের ইওরোপের উগ্রডানপন্থী রাজনীতিকরা যে-‘ইওরোপাস্তান’ প্রচারণা চালান, যার আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ইওরোপের মূলত অভিবাসী মুসলমানরা, তার শেকড় ওসমানি তুর্কিদের সাম্রাজ্যিক সম্প্রসারণের ব্যাপারে আতঙ্কে নিহিত।

১৬০৯ ক্রোয়েশিয়া খ্রিস্টান ধর্মের রোমক ক্যাথলিক মতবাদ ছাড়া আর সব ধর্ম নিষিদ্ধ করা হল।

১৬৬৯ জাগরেব বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত

১৭৯৭ ফরাসি বাহিনী ক্রোয়েশিয়া দখল করে নিল।

১৮০৯ নেপোলিয়ান বোনাপার্তের বাহিনী দখল করে নিল ডালমাশিয়া ও দ্রুবোভনিক।

১৮৩২ ক্রোয়েশিয়ার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূচনাবর্ষ গণ্য হয়।

১৮৬৮ হাঙ্গেরির সাথে ক্রোয়েশিয়া একটি চুক্তি করল।

১৮৭৩ ক্রোয়েশিয়ার ইহুদিদেরকে পূর্ণ নাগরিক অধিকার দেয়া হল।

১৮৯৯ জাগরেবে স্থাপিত হল দ্য ক্যাথেড্রাল অফ দ্য অ্যাজাম্পশন অফ দ্য ব্লেসড ভার্জিন ম্যারি।

১৯১৪-১৮ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয় ক্রোয়েশিয়া।

১৯১৪ প্রকাশিত হল আন্তুন গুস্তাভ মাতোসের দ্য ইয়াং ক্রোয়েশিয়ান লিরিক

১৯১৮ অস্ট্রো-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্যের পতন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে বলকানে সার্ব, ক্রোয়াট, ও স্লোভেনদের রাজ্য ঘোষিত হল। ক্রোয়েশিয়ার জাতীয় সংসদ নবগঠিত রাজ্যটিতে যোগদানের পক্ষে ভোট দিল।

১৯১৯ প্রতিষ্ঠা করা হল জাগরেবের এথনোগ্রাফিক মিউজিয়াম।

১৯২১ সার্ব, ক্রোয়াট, ও স্লোভেনদের রাজ্যের জন্য প্রণীত সংবিধানে ক্রোয়েশিয়ার স্বায়ত্তশাসন বিলুপ্ত করা হলে স্বায়ত্তশাসন পুনর্বহালের দাবিতে ক্রোয়েশিয়ার কৃষক দল প্রচারাভিযান চালাতে শুরু করল।

১৯২৯ সার্ব, ক্রোয়াট, ও স্লোভেনদের রাজ্যের নাম বদলেযুগোস্লাভিয়া রাখা হল।* রাজকীয় একনায়কত্ব কায়েম। এর ফলে দেশটির সরকারব্যবস্থা আরো কেন্দ্রীভূত হল।

* যুগোস্লাভিয়া শব্দের মানে হল দক্ষিণ স্লাভদের ভূমি।

১৯৩০-এর দশক আন্তে পাভেলিচ ফ্যাসিস্ট সংগঠন উসতাসি প্রতিষ্ঠা করলেন।

১৯৩২ প্রকাশিত হল মিরোস্লাভ ক্রলেজার দ্য রিটার্ন অফ ফিলিপ লাতিনোভিচা

১৯৩৬ প্রকাশিত হল আন্তে পাভেলিচের দ্য ক্রোয়াট কোশ্চেন

১৯৩৯ ক্রোয়েশিয়ার কৃষক দল দেশটির স্বায়ত্তশাসন আংশিকভাবে পুনর্বহাল করল।

১৯৪১ নাৎসি জার্মানি, ফ্যাসিস্ট ইতালি, বুলগারিয়া ও হাঙ্গেরি সম্মিলিতভাবে আক্রমণ করল যুগোস্লাভিয়া। বর্তমান বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা এবং সার্বিয়ার পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে ‘বৃহত্তর ক্রোয়েশিয়া’ গঠন করা হল, আন্তে পাভেলিচের পুতুল সরকারকে দেশটির ক্ষমতায় বসান হল। ক্রোয়েশীয় ফ্যাসিস্ট সংগঠন উসতাসি ক্যাথলিক ক্রোয়াট রাজত্ব তৈরির অজুহাতে সার্ব, ইহুদি, জিপসিদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করল।*

* ক্রোয়াট মুসলমানরা এই হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে যান। উসতাসি বিশ্বাস করতো, মুসলমানরা ‘স্বভাবে’ ক্রোয়াট ক্যাথলিক, এবং ধর্ম পরিচয় পাল্টালেও তাঁদের ‘শরীরের ক্রোয়াট রক্ত’ পাল্টায় নি। এই অদ্ভূত বিশ্বাস মুসলমানদের বাঁচিয়ে দিয়েছিল বটে, কিন্তু এটা একটা বিশ্রি বাস্তবতারও জন্ম দিয়েছিল; ক্রোয়াট মুসলমানদের অনেকেই উসতাসি-সংঘটিত যুদ্ধাপরাধে সহায়তা করেন।

১৯৪৫ যুদ্ধ শেষে যুগোস্লাভিয়ায় ক্ষমতায় আসল টিটোর পার্টিজানরা। একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত। জোসিপ ব্রজ টিটোর নেতৃত্বে যুগোস্লাভিয়া সমাজতান্ত্রিক ফেডারেল প্রজাতন্ত্র কায়েম করা হল যেখানে, কাগজেকলমে, সব জাতির সমঅধিকার ছিল।*

*ছয়টি প্রজাতন্ত্রের সমষ্টি ছিল এই ফেডারেল প্রজাতন্ত্র। সার্বিয়া (রাজধানী বেলগ্রেড), মন্টেনেগ্রো (রাজধানী টিটোগ্রাদ), স্লোভেনিয়া (রাজধানী জুবজানা), ক্রোয়েশিয়া (রাজধানী জাগরেব), বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা (রাজধানী সারায়েভো), এবং ম্যাকিদোনিয়া (রাজধানী স্কোপজে)। এদের মধ্যে সার্বিয়ায় দুটি স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ ছিল: কসোভো (রাজধানী প্রিস্টিনা) ও ভোজভোদিনা (রাজধানী নোভি সাদ)।

১৯৬১ প্রকাশিত হল ইভো আন্দ্রিচের দ্য ব্রিজ অন রিভার দ্রিনা।*

* ইভো আন্দ্রিচ পরবর্তীতে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। বর্তমান বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার ভিসেগ্রাদ শহরে ওসমানি আমলে নির্মিত এই দ্রিনা নদীর ওপরকার সেতু পরবর্তীকালে এক মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে ওঠে। ১৯৯১-৯৫ সালের বসনিয়া যুদ্ধ চলাকালে ফ্যাশিস্ত বসনীয় সার্ব বাহিনী দ্রিনা নদীর ওপরকার এই সেতুতে বসনীয় মুসলমান নারী, পুরুষ ও শিশুদেরকে হত্যা করে তাঁদের লাশ পানিতে ছুঁড়ে ফেলত।

ফ্যাসিস্টদের চোখে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ছিল প্রতিশোধ। ওসমানি সালতানাতে দেভশির্মে নামে একটা প্রতিষ্ঠান ছিল, যাতে ভর্তি করতে তারা তাদের বলকান প্রদেশগুলোর খ্রিস্টান প্রজাদের ছেলে বাচ্চাদেরকে জোর করে ধরে নিয়ে যেত। সেকালে বহু সার্ব খ্রিস্টান মায়ের কাছ থেকে তাঁদের ছেলেদেরকে ছিনিয়ে নিয়ে দ্রিনা নদীর ওপরকার সেতু দিয়ে তুরস্কে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ব্রিটিশ লেখক টিম জুদাহ ঠিকই লিখেছেন, “ইতিহাসের সমস্যা হচ্ছে, এটা কখনো থামে না।

১৯৬৭ ক্রোয়াট লেখকরা অধিকতর ভাষিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি তুললেন, যা রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পথ করে দিল।

১৯৭১ ক্রোয়েশিয়ায় ‘ক্রোয়াট বসন্ত’। ক্রোয়েশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে হওয়া এই আন্দোলনকে জাতীয়তাবাদ বলে খারিজ করে দিল। আন্দোলনকারী বহু ছাত্র ও অ্যাকটিভিস্ট গ্রেপ্তার হলেন।

১৯৭৪ যুগোস্লাভিয়ায় এ-বছর একটি নতুন সংবিধান প্রণীত হল, যা ক্রোয়াটদের স্বায়ত্তশাসন বিষয়ক কিছু দাবি মেনে নিল।

১৯৮০ মার্শাল টিটোর মৃত্যু।

১৯৯০ ক্রোয়েশিয়ায় পাঁচ দশকের মধ্যে প্রথম মুক্ত নির্বাচন। নির্বাচনে কমিউনিস্টরা হারে। ক্ষমতায় আসে ফ্রাঞ্জো তুজমানের রক্ষণশীল জাতীয়তাবাদী দল।

১৯৯১ জুন ২৫: ক্রোয়েশিয়া আর স্লোভেনিয়া নিজেদেরকে সার্বভৌম ঘোষণা করে যুগোস্লাভিয়া থেকে বেরিয়ে এল, রক্তপাতের সূচনা। যুগোস্লাভ সেনাবাহিনীর সহায়তা নিয়ে ক্রোয়েশীয় সার্বরা দেশটির পূর্বাঞ্চল থেকে ক্রোয়াটদেরকে বের করে দেয়। এই বছরের শেষ নাগাদ বর্তমান ক্রোয়েশিয়ার এক তৃতীয়াংশ ভূখণ্ড সার্বদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

১৯৯২ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করল ক্রোয়েশিয়া। জাতিসংঘ ক্রোয়েশিয়ায় চারটা সংরক্ষিত অঞ্চল তৈরি করে; যেসব অঞ্চলে ১৪০০০ সেনা মোতায়েন করা হয়, যাদের কাজ ছিল দেশটির ক্রোয়াট আর ক্রোয়েশীয় সার্বদেরকে আলাদা রাখা। ফ্রাঞ্জো তুজমান ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন।

মুক্তি পেল জেলেনা রাজকোভিচের ডকুমেন্টরি ব্লু হেলমেট

১৯৯৩ মস্তার নিয়ে বসনীয় আর ক্রোয়াটদের মধ্যে যুদ্ধ। ক্রোয়াটরা বোমা মেরে মস্তার সেতু উড়িয়ে দিল। এই ঐতিহাসিক সেতুটি ওসমানি আমলে নির্মিত হয়েছিল।

সেপ্টেম্বরে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার ক্রিজ শহরে মুসলমানরা ৩৫ জনেরও বেশি বেসামরিক ক্রোয়াট নাগরিককে হত্যা করে। অক্টোবরে ক্রোয়াটরা অসংখ্য বেসামরিক মুসলমানকে হত্যা করে। বসনীয়-ক্রোয়াট সংঘাতের সবচে তীব্র পর্যায়।

জাতিসংঘ এ-বছর সাবেক যুগোস্লাভিয়ার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটিওয়াই) গঠন করল।

১৯৯৪ মার্চে জাতিসংঘের সহায়তায় গঠিত হয় বসনীয়-ক্রোয়াট ফেডারেশন। মে-তে ক্রোয়েশীয় মুদ্রা দিনার নতুন মুদ্রা কুনা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হল। মুক্তি পেল লুকাস নোলার সিনেমা এভরি টাইম উই পার্ট

১৯৯৫ ক্রোয়াটদের বিজয়ে প্রতিহিংসামূলক আক্রমণের ভয়ে ক্রোয়েশীয় সার্বরা সার্বিয়া এবং বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় পালিয়ে গেল। ক্রোয়েশিয়া এবং বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার যুদ্ধের অবসান।* যেই ডেটন চুক্তিতে সই করার মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধের অবসান ঘটে তার সাক্ষরকারীদের একজন ছিলেন ফ্রাঞ্জ তুজমান।

* ক্রোয়েশিয়া যুদ্ধে প্রায় ৩০,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়, আড়াই লক্ষ মানুষ তাঁদের নিবাসচ্যুত হন।

১৯৯৬ ক্রোয়েশিয়া যুগোস্লাভিয়ার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক চালু করল। কাউন্সিল অফ ইওরোপে যোগ দিল ক্রোয়েশিয়া। মুক্তি পেল ভিনকো ব্রেসানের সিনেমা হাউ দ্য ওয়ার স্টার্টেড অন মাই আইল্যান্ড

১৯৯৭ ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসাবে পুনর্নির্বাচিত হলেন ফ্রাঞ্জো তুজমান।

১৯৯৯ ফ্রাঞ্জো তুজমানের মৃত্যু।

২০০০ ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হলেন উদারপন্থী ক্রোয়েশীয় পিপলস পার্টির স্তেপান মেসিচ। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্যপদ লাভ করল ক্রোয়েশিয়া।

২০০১ ১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে ক্রোয়েশিয়ায় ক্রোয়াটদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে যুগোস্লাভ প্রেসিডেন্ট স্লোবোদান মিলোসেভিচকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করল দ্য নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে অবস্থিত আইসিটিওয়াই। ৩১ অক্টোবর: ক্রোয়েশীয় প্রেসিডেন্ট স্তেপান মেসিচ বর্তমান ইসরায়েলে অবস্থিত ইয়াদ ভাশেমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ক্রোয়াট ফ্যাসিস্টদের হাতে ইহুদি নিধনের জন্য ইহুদিদের কাছে ক্ষমা চাইলেন।

২০০২ জুলাই ১৫: ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা এবং যুগোস্লাভিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানরা বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার রাজধানী সারায়েভোতে এক ঐতিহাসিক সম্মেলনে মিলিত হলেন।

২০০৩ যুগোস্লাভিয়ার আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তি। ইওরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদের জন্য আবেদন করল ক্রোয়েশিয়া। ১৯৯১ সালে কিছু বেসামরিক সার্ব নাগরিককে হত্যা করার দায়ে ক্রোয়াট সেনাপতি মির্কো নোরাচকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হল, বহু ক্রোয়াটের চোখে যিনি যুদ্ধনায়ক।

২০০৪ আত্মস্বীকৃত ক্রাজিনা সার্ব প্রজাতন্ত্রের সাবেক নেতা ক্রোয়েশীয় সার্ব মিলান বাবিচকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দিল আইসিটিওয়াই।

২০০৫ দ্বিতীয় মেয়াদে ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট হলেন স্তেপান মেসিচ।

২০০৯ আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোতে যোগ দিল ক্রোয়েশিয়া।

২০১০ ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট হলেন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট ইভো জোসিপোভিচ। জোসিপোভিচের বেলগ্রেড সফর। ক্রোয়েশীয় শহর ভুকোভার সফর করলেন সার্ব প্রেসিডেন্ট বরিস তাদিচ, যেখানে তিনি ১৯৯১ সালে সার্ব বাহিনীর হাতে ২৬০ জন বেসামরিক ক্রোয়েশীয় নাগরিকের মৃত্যুর জন্য ক্ষমা চাইলেন।

২০১১ সার্ব কর্তৃপক্ষের হাতে গ্রেপ্তার হলেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সাবেক ক্রোয়েশীয় সার্ব গোরান হাদজিচ। ১৯৯৫ সালে সার্বদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করার দায়ে দুই উচ্চপদস্থ ক্রোয়াট সেনাকর্মকর্তা আন্তে গোতোভিনা আর ম্লাদেন মারকাচকে অভিযুক্ত করল আইসিটিওয়াই। দুর্নীতির দায়ে ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগরেবে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইভো স্যানাডারের বিচার শুরু হল।

২০১২ সার্বিয়ার একটি আদালত ১৯৯১ সালে ক্রোয়েশিয়ার লোভাস গ্রামে ৭০ জন বেসামরিক ক্রোয়াট নাগরিককে হত্যা করার দায়ে ১৪ জন সাবেক সেনা ও প্যারামিলিটারি সদস্যকে কারারুদ্ধ করল।

২০১৩ ইওরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যপদ লাভ করল ক্রোয়েশিয়া।

২০১৫ ক্রোয়েশিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হলেন কলিন্ডা গ্র্যাবার-কিরাতোভিচ।

তথ্যসূত্র

BBC. “Croatia – Timeline.” BBC, May 22, 2018.

Pavlovic´, Zoran. Croatia. New York: Chelsea House, 2003.

Schuman, Michael A. Croatia. New York: Facts on File. 2004.

নোট: ইরফানুর রহমান রাফিনের নন-ফিকশন সময়রেখা ঢাকার দিব্যপ্রকাশ কর্তৃক ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। এই ব্লগটি সেই বই সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রকল্প। ঢাকা, চট্টগ্রাম, ও সিলেটের বিভিন্ন বইয়ের দোকানে পাওয়া যাবে সময়রেখা, এবং অনলাইনে অর্ডার দিয়েও সংগ্রহ করা যাবে।

অনলাইন অর্ডার লিংকসমূহ

রকমারি। https://www.rokomari.com/book/227084/somoyrekha
বইবাজার। https://www.boibazar.com/book/somoyrekha
বাতিঘর। https://baatighar.com/shop/product/61547#attr=